৫ আগস্ট ২০২৪ এই তারিখটি শুধু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির মোড় বদলে দেয়নি, দেশের সাংস্কৃতিক অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে তথাকথিত “অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার” নামে ক্ষমতায় বসানো হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। কিন্তু বাস্তবে এই সরকার ক্রমেই রূপ নিচ্ছে এক আদর্শিক শুদ্ধি অভিযানে, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের বহুত্ববাদী ইতিহাস ও সংস্কৃতি মুছে ফেলা।
সুফি ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে ঘৃণার রাজনীতি
বাংলার শতাব্দীপ্রাচীন সুফি দরগাগুলো শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থান নয়, বরং একাধিক ধর্ম ও মতবাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। এই দরগাগুলোকে এখন “বিদ্বেষের কেন্দ্র” বানিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে।
একটি বেসরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ এই সময়কালে ১০৫টির বেশি সুফি দরগা হামলার শিকার হয়েছে।
ভিডিও প্রমাণ থাকলেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং কিছু ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উস্কানিতে এই হামলাগুলো হয়ে চলেছে, আর সরকার রয়েছে দর্শকের ভূমিকায়। প্রশাসনের এই নীরবতা জাতিকে উদ্বিগ্ন করে।
শিল্প, সাহিত্য ও সিনেমার দমন
হামলা শুধু ধর্মীয় স্থানে থেমে নেই। বাংলাদেশে সিনেমা, ভাস্কর্য, শিল্পগ্যালারি—সবই এখন উগ্রবাদীদের নিশানায়।
ভাস্কর্য জয়নুল আবেদিন, ভেনাস মূর্তি, জাতীয় প্রতিকৃতি সবকিছুই “অইসলামিক” ও “অন্যায় প্রতীক” বলে ভাঙচুরের শিকার। থেমিস মূর্তি, সুপ্রিম কোর্টের পাশ থেকে সরিয়ে ফেলা হয় উগ্র গোষ্ঠীর দাবির মুখে
সামাজিক বার্তাবাহী সিনেমা বন্ধ হচ্ছে হুমকির মুখে। সিনেমা হল আগুনে পুড়ছে, আর্ট গ্যালারি লুট হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে একমুখী আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস।
ধানমন্ডি ৩২-এর ধ্বংস জাতীয় স্মৃতির হত্যাকাণ্ড
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি বারবার হামলার শিকার হওয়ার পর চূড়ান্ত ধ্বংস করা হয়েছে এক মবের হাতে। উপস্থিত ছিলেন তথাকথিত "জুলাই আন্দোলন" ও নাগরিক ঐক্য পার্টির কর্মীরা।
প্রবাসী ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্য প্রকাশ্যে এই প্রতীকি স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে “ধ্বংস অভিযান” চালানোর আহ্বান জানান। প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ, প্রতিবাদে না না বলে থাকা তাদের দায়মুক্তি দেয় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও রেহাই পেলেন না
১২ জুন ২০২৫ সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারিবাড়ি জাদুঘরে হামলা চালানো হয়। অভিযোগ? এটি "হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্য" নাকি প্রচার করে। নোবেল বিজয়ী কবির এই উত্তরাধিকার শুধু বাঙালির গর্ব নয়, বিশ্বসম্পদও। তবুও তার বাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং নামেমাত্র একটি "তদন্ত" শুরু হয়েছে,ফলাফল সবার জানা।
বহুত্ববাদ ধ্বংসের এক আদর্শিক অভিযান
এই হামলাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের চেতনাকে পুনর্গঠনের এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। বিএনপি, জামায়াত ও নাগরিক ঐক্য পার্টি তাদের মদদেই চলছে এই সাংস্কৃতিক নির্মূল অভিযান। আর ড. ইউনূসের সরকার নিরব থেকে কার্যত তাদের কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছে।
এটি শুধুই কিছু মূর্তি বা বাড়ির ধ্বংস নয় এটি বাংলাদেশের আত্মার উপর ছোরা চালানো।
আশ্চর্যজনকভাবে, এত বড় সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের পরও UNESCO, পশ্চিমা দাতা গোষ্ঠী কিংবা বিদেশি সরকারগুলো কোনো অবস্থান নেয়নি। ড. ইউনূসকে আন্তর্জাতিক ভাবে ঘৃনা প্রকাশের আহব্বান জানাই তার সরকারের আমলে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ছিন্নভিন্ন হচ্ছে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ শুধু অতীত হারাচ্ছে না ভবিষ্যতের ভিত্তিও হারাচ্ছে। আর এর দায় শুধু উগ্রবাদীদের নয় এই দায়িত্ব পুরোপুরি বর্তমান সরকারের।
একটি দেশ, যার জন্ম হয়েছে ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার জন্য, সেই দেশ আজ তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হারাচ্ছে একদল আদর্শিক শুদ্ধিবাদের নামে।